বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

তরমুজের বীজ পেটে চলে গেলে কি হতে পারে জানা আছে?

আচ্ছে কে আমাদের শিখিয়েছে বলুন তো এটা ভাল নয়, ওটা ভাল নয়! হয়তো পরিবারের বড় কেউই এমন কাজটা করেছে। কারণ তাদের উপরই তো মূলত এই দায়িত্ব গিয়ে বর্তায়, তাই না! তবে যেই শিখিয়ে থাকুন না কেন, সব ক্ষেত্রেই যে ঠিক শিকিয়েছে এমন নয় কিন্তু!
কেন এমন ভাবে বলিছ, তাই ভাবছেন তো? আরে মশাই যে ধরণাটাই মানুন না কেন তার পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকাটা তো জরুরি! কিন্তু খেয়াল করে দেখুন আর্ধেক ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা যুতসই কোনও কারণ খুঁজে পাই না। এই যেমন তরমুজের কথাই ধরুন না। এতদিন পর্যন্ত জেনে এসেছি জল ভর্তি এই ফলটি খাওয়ার সময় মুখ থেকে ফু করে বীজটা তীর বেগে সামনে বসে থাকা বন্ধু হোক কী বিধাতা তার গায়ে নিক্ষেপ করতে হয়। আর যদি মিশন ফেল হয়, তাহলেই কেলো! কারণ পেটে যদি যায় বীজ,
তাহলে পর দিনে পেটে যন্ত্রণা তো হবেই, হতে পারে আরও অনেক কিছু! কিন্তু মজার বিষয় কি জানেন, এই ধরণাটা সিকিভাগও সত্যি না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে গঠনে তরমুজ যতটা কাজে আসে, তার থেকে কোনও অংশে কম কাজে আসে না তার বীজ!বলেন কী মশাই! তরমুজের বীজও সমান উপকারি? একেবারেই! গবেষণা বলছে এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে এবং ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে ভাববেন না এখানেই শেষ, আরও নানা উপকারে লেগে থাকে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। যেমন ধরুন…
১. হার্ট অ্যাটাককে রোধ করে:
তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকেও হ্রাস করে। প্রসঙ্গত, কেন্টাকি স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও রয়েছে সিটরুলিন নামে একটি উপাদান, যা অ্যারোটিক ব্লাড প্রেসারকে কমিয়ে হার্টকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে ক্রনিক হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা তরমুজ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজটা খেতেও ভুলবেন না যেন!
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
পরিমাণ মতো তরমুজের বীজ নিয়ে হালকা করে ভেজে নিয়ে যদি খেতে পারেন, তাহলে শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন বি-এর ঘাটতে কমতে শুরু করে। ফলে কেউ যদি অ্যানিমিয়া রোগে ভুগতে থাকেন, তাহলে নিমেষে সেই রোগ সেরে যায়। কারণ আয়রন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র লহিত রক্ত কণিকারর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তাল্পতার প্রকোপ কমতে শুরু করে। অন্যদিকে ভিটামিন বি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর একবার ইমিউনিটি যদি বেড়ে যায়, তাহলে শুধু সংক্রমণ নয়, আরও একাধিক রোগের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পায় শরীর।
৩. বন্ধ্যাত্ব দূর হয়:
বাবা হওয়ার কথা ভাবছেন নাকি? তাহলে আজ থেকেই তরমুজের বীজ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় জিঙ্ক। এই খনিজটি স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হয় না।
৪. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
সম্প্রতি হওয়া এর ইরানিয়ান স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে প্লাজমা গ্লকজের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থতি ওমেগা-৬ ফ্য়াটি অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়ায়ে দেয় যে ডায়াবেটিস রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৫. ব্রেন পাওয়ার বাড়ে:
তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খনিজটি স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে অ্যালঝাইমারস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই পুষ্টিকর উপাদানটির ঘাটতি যাতে কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
তরমুজের বীজের অন্দরে থাকা জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগ নিমেষে কমে যায়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিলে ডায়ারিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কাও থাকে। তাই বিষয়টি মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন