বেশ কিছু কেস স্টাডিতে একটা কথা সামনে এসেছে যে ঝাল খাবার খাওয়ার
অভিজ্ঞতাকে অনেকে রোলার-কোস্টার রাইডের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। আসলে সবাই
জানেন ঝাল খেলে হুসফাস করতে হবে। হবে অল্প-বিস্তর কষ্টও। তবু সেই অভিজ্ঞতা
পেতে সবাই যেন মুখিয়ে থাকেন। আর যদি বাঙালিদের কথা বলেন, তাহলে বলতে হয়,
আমাদের জিনেই রয়েছে তেল-ঝালের প্রতি এক অমোঘ প্রেম। তাই তো নানা রোগে
আক্রান্ত হওয়ার পরেও ঝাল-ঝাল, তেল ডুবু-ডুবু কোচি পাঁঠার ঝোল খেতে আমাদের
কেউ আটকাতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন ঝাল খাবার খেলে কি শরীরে বিবিধ
অঙ্গের ক্ষতি হয়ে থাকে?এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টায় একাধিক গবেষণা
হয়েছে। তাতে উঠে এসেছে ঝাল খাবার খেলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং
একাধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. আয়ু বৃদ্ধি পায়:
চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের গবেষকদের করা একটি রিসার্চ অনুসারে
যারা নিয়মিত ঝাল খাবার খান, তাদের অসময়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৪ শতাংশ
কমে যায়। তাই তো বলি, সুস্থভাবে যদি দীর্ঘদিন বাঁচতে চান, তাহলে সপ্তাহে
৩-৪ দিন ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার খেতে ভুলবেন না যেন!
২. মানসিক অবসাদের মাত্রা কমে:
বেশ কয়েকদিন ধরেই মনটা কেমন দিশেহারা। সেই সঙ্গে হাসিও যেন দূর পালিয়েছে!
তাহলে আর সময় নষ্ট না করে পছন্দের ঝাল খাবার খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন
নিমেষে মন ভাল হয়ে যাবে। কারণ এমন ধরনের খাবার খাওয়া মাত্র আমাদের
মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক "ফিল গুড" হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন
খারাপের কালো মেঘ কাটতে সময় লাগে না।
৩. ওজন কমে:
একেবারে ঠিক শুনেছেন! নিয়মিত ঝাল খাবার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য
হয়। কারণ লঙ্কার শরীরে উপস্থিত ক্যাপসিসিন নামক উপাদান শরীরে প্রবেশ করার
পর মেটাবলিজেম রেট এতটা বাড়িয়ে দেয় যে ফ্যাট জমার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
সেই সঙ্গে ফ্যাট বার্ন করার প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে। ফলে ওজন বাড়ার
কোনও আশঙ্কা কমে। প্রসঙ্গত, ঝাল খাবার খাওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত
ক্যাপসিসিন শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদকে গলাতে থাকে। তাই তো চটজলদি ওজন
কমাতে লঙ্কা দিয়ে বানানো ঝাল জাল খাবার খাওযার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
বিশেষজ্ঞরা।
৪. ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে:
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের প্রকাশ করা রিপোর্ট
অনুসারে কাঁচা লঙ্কায় উপস্থিত ক্যাপসিসিন, ক্যান্সার সেলেদের মেরে ফেলতে
বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ঝাল খাবার তৈরি করার সময় ব্যবহৃত
হলুদ এবং সরষের তেলও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয়। গবেষণা অনুসারে হলুদ এবং
সরষের তেল ক্যান্সার সেলের গ্রোথ আটকাতে এবং টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, আমরা অনেকেই খাবারের
স্বাদ বাড়াতে গোলমরিত ব্যবহার করে থাকে। এই মশলাটিও ক্যান্সার রোগের
প্রতিরোধে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
৫. রাগের প্রকোপ কমে:
আপনি কি খুব রাগী? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই বেশি মাত্রায় ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার
খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে
ঝাল খাবার খাওয়া মাত্র সেরোটোনিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে।
ফলে রাগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, রাগ হল সেই আগুন, যা যে
কোনও সময় যে কোনও সম্পর্ককে শেষ করে দিতে পারে। তাই বন্ধু আজ থেকেই রাগ
কমানোর চেষ্টায় লেগে পরুন। আর এই কাজে আপনাকে কে সাহায্য করতে পারে, তা
তো জেনেই গেলেন, তাই না!
৬.ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
ঝাল খাবার খাওয়া মাত্র সারা শরীর গরম হয়ে যায়। ফলে রক্তের প্রবাহ বাড়ে
যাওয়ার কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসতে সময় নেয় না। প্রসঙ্গত,
লঙ্কায় উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি-ও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে মজবুত করতে এবং সংক্রমণকে দূরে
রাখতেও সাহায্য় করে।
৭. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
সমগ্র বিশ্বজুড়ে হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব দেশের নাগরিকেরা বেশি
মাত্রায় ঝাল খেয়ে থাকেন, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম
থাকে। কারণ লঙ্কা দিয়ে বানানো ঝাল খাবার খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের
মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। সেই
সঙ্গে হার্টের অন্দরে হওয়া ইনফ্লেমেশনও কমে। ফলে নানাবিধ হার্টের রোগে
আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন