জোড়া ব্যথা,নিরাময়,
ইনজুরি
ছাড়াও বিভিন্ন রোগে জোড়া আক্রান্ত
হয়ে থাকে। ইনজুরি
ও রোগের বিভিন্ন উপসর্গের
মধ্যে ব্যাথা অন্যতম।
জোড়া ব্যথা যে কারণেই
হোক এর যথোপযুক্ত নিরাময়
প্রয়োজন অন্যথায় জোড়ায় বিভিন্ন ধরনের
জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইনজুরি
ও রোগের কারণে জোড়ার
বিভিন্ন স্তরে ক্ষতি হতে
পারে। সুতরাং
ব্যথার কারণ দ্রুত অনুসন্ধান
করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জোড়াকে
ভয়াবহ ক্ষতি হতে রক্ষা
করা যায়। জোড়াতে
ফ্লুইড জমলে, অতিরিক্ত হাড়
হলে, সাইনোভাইটিস, বার্সাইটিস হাড় ও টিস্যুর
টিউমার হলে এবং জোড়া
সুসংগঠিত না হলে জোড়ায়
ব্যথা হয়। ইনজুরির
তীব্রতা ও প্রকারভেদ অনুযায়ী
জোড়ায় সাথে সাথে বা
চার থেকে ছয় ঘণ্টা
পরে ব্যথা হতে পারে। কিছু
কিছু জোড়া (যেমন কাঁধ)
আঘাতের কারণে তীব্র ব্যথাসহ
জোড়ার আরবণ (ক্যাপসুল, ল্যাবরাম)
ও পেশি ছিড়ে মারত্মক
ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ইনজুরির
ফলে জোড়া ছুটে গেলে,
ছুটে যাওয়ার উপক্রম হলে
বা বার বার স্থানচ্যুতি
হলে জোড়ায় ব্যথা হয়। কিশোর
বয়সে রিউমেটিক জ্বরে বড় জোড়ায়
(গোড়ালি, হাঁটু) ব্যথা হয়। পঁচিশ
থেকে পঞ্চান্ন বৎসর বয়সে রিউমাটয়েড
আর্থ্রাইটিস থেকে সাধারণ ছোট
জোড়া (হাত ও পায়ের
আঙুল), এবং কিছু ক্ষেত্রে
বড় জোড়া আক্রান্ত হয়ে
ব্যথার উদ্রেক করে।
এ ছাড়া গাউটি (৭৫%
ক্ষেত্রে পায়ের বুড়ো আঙুল),
রিএকটিভ, সোরিয়াটিক (১০% থেকে ২৫%
ক্ষেত্রে জোড়া আক্রান্ত হয়),
স্পোনডোলাইটিক ও অসটিওআর্থ্রাইটিসের জন্য
জোড়ায় ব্যথা হয়ে থাকে। এ
ধরনের আর্থ্রাইটিসে জোড়ায় সাধারণত ছয়
সপ্তাহের বেশি ব্যথা থাকে। অসটিওআর্থ্রাটিস
বা গিটে বাত ওজন
বহনকারী (হাঁটু, গোড়ালি ও
হিপ) জোড়াকে আক্রান্ত করে
ব্যাথার সৃষ্টি করে।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ও টিবি (যক্ষ্মা)
জীবানু দ্বারা জোড়া সংক্রমণ
হলে ব্যথা হয়।
বয়স্কদের ব্যবহার জনিত ক্ষয়ের ফলে
ব্যথা ছাড়াও জোড়া আটকিয়ে
যায় এবং জোড়ার দৃঢ়
অবস্থা নষ্ট হয়।
ব্যথা
সম্পর্কে জানতে হবে :
* তীব্র
বা কম ব্যথা।
* এক বা অধিক জোড়ায়
ব্যথা।
* শুরুটা
কি হঠাৎ বা আস্তে
আস্তে?
* প্রথম
ব্যথা?
* সব সময় থাকে বা
মাঝে মাঝে ব্যথা এবং
ভালো হয়ে যায়।
* দিনে
বা রাতে কখন ব্যথা
বাড়ে এবং কমে।
* কিসে
ব্যথা বাড়ে এবং কমে?
জোড়া ব্যথার জটিলতা :
* জোড়া
নড়াচড়া করা কষ্টকর।
* জোড়া
গরম ও লাল হতে
পারে।
* পেশী
শুকিয়ে যায়।
* লিগামেন্ট
ঢিলা হয় এবং ছিড়ে
যায়।
* হাড়
ও তরুণাস্থি ক্ষয় হয়।
* আর্থ্রাইটিস
হয়।
* পেশি
দুর্বলতা এবং লিগামেন্ট ঢিলা
বা ছিড়ার জন্য জোড়া
অস্থিতিশীল হয়।
* জোড়
জমে যায়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন ?
* জোড়ার
ব্যথা সাত দিনের বেশি
স্থায়ী হলে।
* ব্যথা
ছাড়াও জোড়া লাল এবং
গরম হলে।
* শরীরে
জ্বর বা ঠান্ডা অনুভূতি
হলে।
* আর্থ্রাইটিস
ব্যতীত অন্য কারণে জোড়ায়
ব্যথা হলে।
* যে কোন কারণে জোড়ায়
ছিদ্র হলে।
* ব্যথাসহ
জোড়া অস্থিতিশীল হলে বা আটকিয়ে
গেলে।
* অল্প
ব্যথাসহ জোড়া বারবার স্থানচ্যুতি
হলে।
নিরাময়
:
চিকিৎসা
নির্ভর করে জোড়া ব্যথার
কারণসমূহ এবং এর তীব্রতার
উপর। সঠিক
রোগ নির্ণয় করতে রোগের
ইতিহাস শুনতে হবে, ভালভাবে
শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে এবং
প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সাহায্য নিহে হবে।
যেমন আর্থ্রাসিনটোসিস করে জয়েন্ট ফ্লুউড
পরীক্ষা, রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা,
জোড়ার এক্স-রে, বোন
স্ক্যান, সিটি স্ক্যান এবং
এম আর আই।
যে কোনো কারণেই ব্যথা
হউক না কেন জোড়াকে
বিশ্রামে রাখতে হবে।
স্পিন্ট বা জয়েন্ট সাপোর্ট
দিয়ে জোড়াকে উঁচু করে
রাখলে ব্যথা কম হবে। জোড়ায়
ইনজুরি হলে প্রতি ঘণ্টায়
দশ থেকে পনের মিনিট
করে বরফের বা ঠান্ডা
পানির সেক দিলে ব্যথা
কমে আসবে। এভাবে
৪৯ ঘণ্টা থেকে ৭২
ঘণ্টা চলতে থাকবে।
আর্থ্রাইটিস ও জীবাণু সংক্রমণের
ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানির
সেঁক (মোয়েস্ট হিট) খুবই উপকারী। ব্যথা
নিরাময়ের জন্য বেদনা নাশক
ও জীবাণু সংক্রমনের জন্য
এ্যন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে
হবে। আর্থ্রাটিসে
ব্যথার ওষুধ ছাড়াও রোগের
প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত ওষুধ
সেব করতে হবে।
স্বল্পসময়ের জন্য স্টেরয়েড সেবন
করলে দ্রুত ব্যথা কমে
আসে। আর্থ্রাটোসিস
করে জয়েন্ট ফ্লুউড বের
করে স্টেরয়েড এবং কখনও কখনও
হায়ালুরোনিক এসিড ইনজেকশন জোড়ায়
পুশ করলে উপসর্গ দ্রুত
লাঘত হতে পারে।
জোড়ায় স্বাভাবিক নড়াচড়া ও পেশি
শক্তিশালি হওয়ার ব্যায়াম চালিয়ে
যেতে হবে। কখনও
কখনও ফিজিক্যাল থেরাপির (এস ডব্লিউ ডি
ও ইউ এস টি)
প্রয়োজন হয়।
আর্থ্রাস্কোপিক
চিকিৎসা :
মেডিকেল
বা কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ব্যথা না সারলে
বা জটিলতা দেখা দিলে
সার্জিক্যাল বা আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসা
গ্রহণ করতে হবে।
ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে আর্থ্রোস্কোপ জোড়ায় প্রবেশ করিয়ে
:
* জয়েন্ট
বিসঙ্কোচন ও ওয়াশ আউট
করা যায়।
* অতিরিক্ত
হাড় এবং বিচ্ছিন্ন হাড়
ও তরুণাস্থি বের করা হয়।
* সাইনোভেকটমি,
মেনিসেকটমি ও সাইনোভিয়াল বায়োপসি
করা হয়।
* নতুন
লিগামেন্ট তৈরি এবং মেনিকাস
ও পেশি রিপেয়ার করা
হয়।
* জোড়ার
আবরণ (ক্যাপসুল ও ল্যাবরাম) সেলাই
করে জোড়া স্থানচ্যুতি রোধ
করা যায়।
আর্থ্রোস্কোপিক
চিকিৎসার পর নিয়মিত ও
পরিমিত পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা
দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে।
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর
হোসেন
হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ
এবং আর্থ্রাস্কোপিক সার্জন
ডিজিল্যাব
মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর-১০, ঢাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন