বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ কত দিন স্থায়ী হয়?

কজন মহিলা গর্ভাবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। সে তার নিজ শরীরের অনেক পরিবরতন দেখতে পায় যে সব পরিবর্তন থামানো যায় না আর কেউ চেষ্টাও করেনা। এই পরিবর্তন গুলো ডেলিভারির পর আবার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সমস্যা যখন সৃষ্টি হয় তখন অনেক কিছু স্বাভাবিক হয় না এর মধ্যে একটা হচ্ছে রক্ত বন্ধ না হওয়া। অনেকের ব্লাড বন্ধ হতে চায় না ডেলিভারির অনেকদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও। 
ব্লিডিং কেন হয়?
বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর যে ব্লিডিং হয় একে বলে lochia. এটা এক ধরণের স্রাব যা অনেকটা পিরিয়ড এর মতো মনে হয়। ডেলিভারির পর ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত এটা হতে পারে। এই অবস্থার দুইটা ভাগ আছে। 
১. প্রাইমারি – প্রসবের পর থেকে ২৪ ঘণ্টা এর মধ্যে হবে
২. সেকেন্ডারি- ২৪ ঘণ্টা এর পর থেকে ৪২ দিনের/ ৬ সপ্তাহ এর মধ্যে হবে।
প্রামারির কারণ হতে পারেঃ 
১. জোর করে/ সময়ের আগেই ডেলিভারি এর চেষ্টা করানো
২. গর্ভকালীন রক্তপাত
৩. অধিক বাচ্চা ধারণ (৪ টির বেশি বাচ্চা)
৪. অপুষ্টি
৫. ১২ ঘণ্টা এর বেশি লেবার
৬. জরায়ু এর জন্মগত ত্রুটি
৭. ফাইব্রয়েড
৮. অতিরিক্ত ওজন (বিএমআই >৩৫) অধিক বয়সে গর্ভধারণ (৪০ এর বেশি বয়স) পূর্বে পিপিএইচ হয়েছে এমন মা। 
৯. যমজ বাচ্চা
১০. রক্তশূন্যতা
গর্ভফুল এর অংশ জরায়ু তে থেকে যাওয়া সেকেন্ডারির প্রধান কারণ। এছাড়া ইনফেকশন থেকে, সিজারিয়ান ডেলিভেরি এর জটিলতা থেকে এমন হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারিতে ব্লিডিং : সাধারণত বাচ্চা জন্মের ৩ দিন পর ব্লাড দেখা যায়। ব্লাড উজ্জ্বল বা গাঢ় লাল হতে পারে। এটাতে মাসিক এর মতো গন্ধ থাকতে পারে। ছোট ছোট জমাট বাধাও হতে পারে। সাত দিনের মধ্যে এই ব্লাড এর কালার চেঞ্জ হয় আর জমাট বাধা রক্ত আসাও বন্ধ হয়ে যায়। 
সিজারের পর ব্লিডিং : সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে রক্তের পরিমাণ কম হওয়ার কথা। কয়েক সপ্তাহ অল্প অল্প করে ব্লাড আসতে পারে। রক্তের কালার লাল থেকে বাদামি আকার ধারণ করতে পারে। 
খুব বেশি রক্ত গেলে কী করবেন? 
যদি অবস্থা খুব বেশি ভয়াবহ হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের বা কোন হাসপাতালে যেতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত বড় প্যড ব্যবহার করতে হবে।

মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে পরখ করবেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না?

র্ভবতী হওয়া মেয়েদের জীবনে এখ অন্য অনুভূতি বা বলা ভাল সবচেয়ে সুন্দর অুভূতি। গর্ভধারণ শুধু একজন মহিলাকে আনন্দ দেয় তা না তাঁর জীবনকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
গর্ভধারণ পরীক্ষার জন্য আজকাল একাধিক যন্ত্রপাতি, প্রেগন্যান্সি কিট বাজারে এসেছে। তার দামও নেহাত কম নয়। যদি আপনার কাছে সময় ও অর্থের অভাব থাকে এই ধরণের দামি মেডিক্যাল কিট কেনার জন্য তাহলে চিন্তা করবেন না, ঘরোয়া একাধিক বিশ্বস্ত পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কি না


অতীতে যখন এই ধরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হয়নি তখন ঘরোয়া পদ্ধতিতে মহিলারা যাচাই করতেন গর্ভধারণের পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলি বিশ্বাসযোগ্য, এবং নিপুণভাবে আপনার গর্ভধারণের সত্যতা আপনার কাছে তুলে ধরবে।
আজ আমরা এমনই ৭টি ঘরোয়া গর্ভধারণ পরীক্ষা পদ্ধতির কথা আপনাদের জানাব।


টুথপেস্ট

১ চামচ সাদা টুথপেস্টের সঙ্গে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ২-৩ ফোঁটা মেশান। যদি টুথপেস্টে ফেনা তৈরি হয় এবং রং নীলচে হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

ব্লিচিং পাউডার

২ টেবিলচামচ ব্লিচিং পাউডারে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ২-৩ ফোঁটা মেশান। যদি ব্লিচিং পাউডার একইরকম থাকে তাহলে বুঝবেন গর্ভে সন্তান নেই। আর যদি ব্লিচিং পাউডারের মধ্যে বুদবুদ উঠতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

ভিনিগার

১ টেবিল চামচ ভিনিগারে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ৪ ফোঁটা মেশান। যদি ভিনিগারের রং একই থাকে তাহলে বুঝবেন কিছুই হয়নি। কিন্তু যদি এই মিশ্রণের রং বদলাতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন আপনার গর্ভধারণ পরীক্ষার ফল ইতিবাচক।

সাবান

একটি শুকনো সাবান নিন। তাতে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ৩-৫ ফোঁটা ফেলুন। যেই জায়গায় মূত্র ফেলছেন সেই জায়গায় যদি ফ্যানা তৈরি হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভবতী।

জং

কোনও মহিলা গর্ভবতী কি না তা জানার এই অতি প্রাচীন পদ্ধতি। একটি টিনের পাত্রে জং ধরা তালা বা শিকল রাখুন। এবার এই পাত্রের মধ্যে আপনার দিনের প্রথন মূত্রের পুরোটাই ঢেলে দিন। ৩ ঘন্টা পরে পাত্র থেকে তালা বা শিকলটা বের করুন। যদি পাত্রের তলায় ছাপা ছাপা দাগ পড়ে যায় তার অর্থ হল গর্ভধারণ পরীক্ষা ইতিবাচক।

ওয়াইন

এক গ্লাস হোয়াইট ওয়াইনে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ৫-৬ ফোঁটা ফেলুন। যদি ওয়াইনের রং বদলে যায় তাহলে বুধবেন আপনার গর্ভে সন্তান এসেছে।

চিনি

২-৩ চা চামচ চিনি নিন। এতে আপনার দিনের প্রথম মূত্রের ১-২ ফোঁটা ফেলুন। যদি চিনি দলা পাকিয়ে যায় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

পেটে গ্যাস হলে কী করবেন?

পেটে গ্যাস হওয়া খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। এটি অস্বস্তি ও বিব্রতকর। পেটে অস্বস্তি লাগা, পেট ফেঁপে থাকা, জোরে জোরে ঢেঁকুর ওঠা ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে পেটে গ্যাস হয়েছে।
গ্যাসের সমস্যা অতিরিক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। তবে তার আগে কিছু বিষয় মেনে দেখতে পারেন।
  • পেটে গ্যাস হলে শুয়ে না থেকে বসে থাকবেন। এতে অনেকটা আরামবোধ হয়।
  • পেটে গ্যাস হলে বেশি করে পানি পান করতে হবে।
  • রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে আগে খাবার না খেয়ে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে। সাধারণত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার সেরে নেওয়াই ভালো।
  • পেটে গ্যাস কমাতে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
  •  এ ছাড়া অতিরিক্ত ঝাল মসলা বা তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। ‌
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।

2
কমবেশি অনেকেই গ্যাসের সমস্যায় (অ্যাসিডিটি) ভুগে থাকেন। মূলত পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে এসিড হবার কারণে পেটে ব্যথা, গ্যাস, বমিবমি ভাব, মুখে দুর্গন্ধের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত বেশি ঝাল ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, দুশ্চিন্তা, ব্যায়াম না করা ইত্যাদির কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হয়।
বিভিন্ন ধরনের খাবারের কারণেও গ্যাস হতে পারে। তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তির ওষুধ রান্নাঘর ও ফ্রিজে রাখা কিছু খাবারের মধ্যে লুকিয়ে আছে।চলুন জেনে নেয়া যাক – গ্যাস হলে করনীয় : •  ঘুমাবেন না :  খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না। কারণ  খাবার হজম না হলে পেটে গ্যাস তৈরি করে। •  ডাল জাতীয় খাবার খাবেন না :  গ্যাস হলে যেকোনো ধরণের ডাল যেমন, মসুরের ডাল, বুট, ছোলা, বীণ, সয়াবিন ইত্যাদি খাবেন না। কারণ এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায় না এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। •  তেল জাতীয় খাবার : ডুবো তেলে ভাজা যেকোনো ধরণের তৈলাক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। •  শাক-সবজি : যে সবজিগুলো সহজে হজম হয় না যেমন, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাকে থাকা রাফিনোজ নামক উপাদান পেটে গ্যাস তৈরি করে।   গ্যাস নিরাময়ের উপায় : •  ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন : নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা সময় নিয়ে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। এতে পেটের মধ্যে গ্যাস জমতে পারবে না। •  দই বা মাঠা : দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রোবায়টিক উপাদান যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে। এছাড়া মাঠাতে থাকা ল্যাক্টিক এসিড গ্যাসকে স্বাভাবিক করে।তাই প্রতিদিন নিয়মিত মাঠা বা দই খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। •  শসা : পেট ঠাণ্ডা রাখতে শসার তুলনা হয় না। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের চাপ কমিয়ে আনে এবং বুকের জ্বালা দূর করে। •  আদা : আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার যা গ্যাসের সমস্যা দূর করে। আদা চুষে খেলে কিংবা চা বানিয়ে খেলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায়। •  লবঙ্গ : লবঙ্গ তাৎক্ষণিক গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে কিংবা সমপরিমাণ এলাচ ও লবঙ্গ গুঁড়া খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সাময়িক গ্যাসের ব্যথার জন্য উল্লেখিত উপায়গুলো অবলম্বনের পরও যদি ব্যথা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন। এন/এমকে

মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

অতিরিক্ত ঘাম হলে কী করবেন

ঘাম শরীরের অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রক্রিয়া। ঘাম না হওয়া কখনো কখনো বড় ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ। তবে এর মধ্যেও কারো কারো দেখা যায় অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে। এই অতরিক্ত ঘামও সমস্যা তৈরি করে। আজ ১৬ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৬৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বারডেম হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিশিষ্ট চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. রেজা বিন জায়েদ।
প্রশ্ন : ঘামতো মানুষের শরীরে হয়ই এবং হতেই হবে। এটি অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রক্রিয়া। বরং ঘাম না হওয়াই সমস্যা। বুঝতে হবে এটা বড় ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ।  তবে এর মধ্যে কারো কারো দেখা যায় এত বেশি ঘাম হয় সেটিও একটি সমস্যা। একজন মানুষের ঘাম হওয়াটা প্রয়োজন কেন এবং কী পরিমাণের বেশি দেখলে আমরা মনে করব তার অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে?
উত্তর : ঘাম শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শরীরের ভেতরে যে তাপমাত্রা আছে- এটি যাতে সহজে বের হয়ে যায় এবং ভেতরে বেশি গরম না হয়ে যায় সে জন্য ঘাম হয়। তার মানে হচ্ছে, ঘাম যখন হয় তখন শরীরের কিছু তাপমাত্রা নিয়ে সে বের হয়ে আসে এবং বাইরের আবহাওয়ায় এসে সেটা শুকিয়ে যায়। অনেকটা এয়ার কন্ডিশন পদ্ধতির  মতো। বাইরের সঙ্গে ভেতরের তাপমাত্রা রক্ষা করা। এটা খুব প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা দরকার, যেটা আপনারা জানেন, ৯৮ দশমিক ৪ থেকে ৯৯ ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলেই শরীরের ভেতরে যে কার্যকলাপগুলো থাকে সেগুলো ঠিকমতো হতে চায় না। মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়, অসুস্থ অনুভব করে। এমনকি বিছানায় পড়ে যায়।  জ্বর হলেও হয় ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। সে জন্য ঘাম আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রক্রিয়া।

ডা. মো. রেজা বিন জায়েদ।
প্রশ্ন : যেটি জানতে চেয়েছিলাম, ঘামতো সাধারণত হবেই। তবে এটি কী পরিমাণ বেশি হলে তা অতিরিক্ত হচ্ছে বলা হবে?
উত্তর : সহজভাবে সবাইকে বুঝতে হবে, গরম আবহাওয়ার মধ্যে বা পরিবেশের মধ্যে যে যাবে তখনই ঘাম হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম কাকে বলে? ওই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বা ওই তাপমাত্রায় অনেকে রয়েছে বেশি ঘামা শুরু করে। এই ঘামাটা আরম্ভ হয় বোগল এবং এর ভেতরের অংশগুলো যে ঢাকা থাকে এখানে ঘামতে শুরু করে। এমন অবস্থা হয় যে পরনের পোশাক ভিজে যায়। মুখ পর্যন্ত ভেজা আরম্ভ করে। ওই তাপমাত্রায় অন্যরাও ঘামছে বটে কিন্তু এ রকম নয়। তখন ধরে নিতে হবে স্বাভাবিক যতটুকু ঘাম হওয়ার কথা তার থেকে বেশি হচ্ছে।
প্রশ্ন : কারো কারো দেখা যায় শরীরের ঢাকা কিছু অংশ, বগলে অংশে এসব জায়গাতে বেশি ঘাম হয়। কারো কারো হাতের তালু প্রচণ্ড ঘামে। এত বেশি ঘামে যে লিখতে গেলে কাগজ ভিজে যায়। কারো দেখা যায় মাথাটা বেশি ঘামে। কারো আবার মাথার পেছনের দিকটা ঘামে – এর কারণ কী?
উত্তর : আসলে ঘামের রোগ যাদের আছে তাদের আমরা দুইভাগে ভাগ করি। একটা হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত ঘামে। যেমন হাত-পা ঘামা আপনি বলছিলেন বা মাথার পেছনটা ঘেমে যাচ্ছে বা মুখটা ভিজে যাচ্ছে এটা হচ্ছে লোকালাইজড হাইপার হাইড্রোসিস। হাইপার হাইড্রোসিস মানে হচ্ছে  অতিরিক্ত ঘাম।
আরেকটি ভাগ আছে এটি হচ্ছে জেনারালাইজড হাইপার হাইড্রোসিস। এটা নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় নয় সারা শরীর ভিজে জব জব করছে।
ঘাম সাধারণত ভেতরের রোগের কারণও হয়। যাদের থাইরোয়েড রোগ আছে তারা অতিরিক্ত ঘামে। কিছু কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও ঘাম হয়।  অন্যান্য অনেক রোগ আছে, যেমন যেটার জন্য অতিরিক্ত  ঘাম হতে পারে। যেমন, ক্যানসারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
আবার অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই ঘাম হয়। একে অনেক সময় ইডিওপেথিক বলে। হাত পা ঘামে, এটি অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই। কেউ কেউ একটু স্নায়বিক চাপে পড়লেও ঘেমে যায়।
আসলে ঘামের বিভিন্ন সময় আছে। শুধু যে গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘামবে তা নয়। কেউ কেউ আছে খাবার সময় অতিরিক্ত ঘামে। কেউ আছে পরীক্ষার হলে বসে অতিরিক্ত ঘামে বা মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে বসে অতিরিক্ত ঘামতে থাকে। এগুলো সব স্নায়ুজনিত ঘাম।
প্রশ্ন : খাওয়ার সময় মুখমণ্ডল এলাকায় অনেকে ঘামে। আপনি বলছিলেন কোনো রোগ ছাড়া এমনিতেও কেউ বেশি ঘামতে পারে। আবার নির্দিষ্ট কোনো রোগের কারণেও ঘামতে পারে। সে জন্য অতিরিক্ত ঘাম হলে তার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করা উচিত। যদি কোনো রোগের কারণে ঘাম না হয়, এমনিতেই যদি ঘামতে থাকে তাতে অসুবিধা কী?
উত্তর : অতিরিক্ত ঘামতে থাকলে অসুবিধা তো বিব্রতকর অবস্থা। যেমন, হয়তো সবাই এক জায়গায় আছে এর মধ্যে একজন বেশি ঘামছে, বারে বারে ঘামছে এবং ঘাম মোছার জন্য চেষ্টা করছে।
ঘাম অতিরিক্ত হলে এর কারণে জামা কাপড়ে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। এটাকে আমরা বলি ব্রম হাইড্রোসিস। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে দুর্গন্ধ হওয়া।
প্রশ্ন : ত্বকের রোগ কী হতে পারে অতিরিক্ত ঘামের কারণে?
উত্তর : অতিরিক্ত ঘামের কারণে ছত্রাক জনিতরোগগুলো খুব সহজে হয়ে যায়। আমাদের শরীরে যে সাদা সাদা ছুলি হয় এটা অতিরিক্ত ঘামের কারণেই হয়। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে অনেক সময় ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়ে যায়। এতে শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যায়। এটার পাশ্বর্প্রতিক্রিয়াগুলো আসতে থাকে।
প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি যখন অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে আসে তখন আসার পর কীভাবে নির্ধারণ করেন এটি কোনো রোগের কারণে হচ্ছে না সাধারণ ভাবে হচ্ছে?
উত্তর : প্রথমে আমরা রোগী যে ঘামছে এই বিষয়ে কী কী অভিযোগ করছে তা গুরুত্ব দেই। তারপর জিজ্ঞেস করি এটি শরীরের কোনো অংশ থেকে হচ্ছে কি না। আমরা যখন দেখি এটি নির্দিষ্ট অংশে হচ্ছে তখন লোকাল হাইপার হাইড্রোসিস বলে নেই। আর সারা শরীরে হলে জেনারালাইজড।
এর পরীক্ষা নীরিক্ষারও ব্যবস্থা আছে। জেনারালাইজড হলে আমরা থাইরোয়ের কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি নির্ণয়ের পরীক্ষায় যাই। একটু আগেই বলছিলাম, থাইরোয়েডের সমস্যায় এমনটা হতে পারে।
তা ছাড়া কিছু পাউডার আছে ওটা শরীরে মেখে দিলে ঘাম লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওটার রং পরিবর্তন হয়। তা দেখে আমরা বুঝতে পারি। ঘামের পরিমাণটা কী রকম এবং কোন কোন জায়গা থেকে অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে।
প্রশ্ন : এটি প্রতিকারে করণীয় কী?
উত্তর : লোকালাইজড যদি হয়, ধরুন হাত-পা ঘামছে, তাহলে হাত-পা ঘামার জন্য বিশেষ চিকিৎসা আছে। অ্যালুমোনিয়াম ক্লোরাইড নামে এক ধরনের উপাদান আছে সেটি দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য  হাত-পায়ের ঘাম বন্ধ করা সম্ভব। কোনো কোনো সময় ইনজেকশন দিয়েও হাত-পা ঘামা বন্ধ করা যেতে পারে। এটি দিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু সার্জারি আছে, করলে স্থায়ীভাবে লোকালাইজড ধরনের ঘামা বন্ধ করা যায়। এটা নির্ভর করে হাত-পা ঘামার পরিমাণ কেমন, কতটুকু, তার অসুবিধা হচ্ছে কি না- তার ওপর।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের প্রধান রাশেদ খান বলেন, হাত-পা ঘামার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো বের করা যায়নি। তবে বংশগতভাবে এ রোগ থাকা, শারীরিক কিছু সমস্যা, শরীরের ভেতরের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি কারণে হতে পারে।

হাত-পা ঘামার কারণ
হাত-পা ঘামার প্রাথমিক কারণ হিসেবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে অতিরিক্ত স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে ঘাম হয়ে থাকে। এ ছাড়া আরও নানা কারণে হাত-পা ঘেমে থাকে। যেমন পারকিনসন্স ডিজিজ, থাইরয়েডে সমস্যা, ডায়াবেটিস, জ্বর, শরীরে গ্লুকোজের স্বল্পতা, মেনোপোজের পর প্রভৃতি। অনেক সময় শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে হাত-পা অতিরিক্ত ঘামতে পারে। আবার মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও জেনেটিক কারণে হাত-পা ঘামে।

চিকিৎসা
সঠিক কারণ বের না করে চিকিৎসা করা উচিত নয়। আগে অনুসন্ধান বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কারণ খুঁজতে হবে। তারপর সঠিক চিকিৎসা নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাধারণত বিভিন্নভাবে হাত-পা ঘামা কমানো যেতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত একধরনের বিশেষ লোশন হাত-পায়ে ব্যবহার করলে হাত-পা ঘামা কমে যায়। বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রে হাত-পা সেকে নিলে হাত-পা ঘামা কমে যাবে। পরবর্তী সময়ে এটি দেখা দিলে আবার একইভাবে সেই বৈদ্যুতিক যন্ত্রে হাত-পা সেকে নিতে হবে। এসব পদ্ধতি ছাড়াও একটি বিশেষ ধরনের নার্ভের অস্ত্রোপচার করেও হাত-পা ঘামা কমানো যায়।

রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কোমর ব্যথায় করণীয়

কোমরের ব্যথা কমবেশি সব মানুষের হয়। এই ব্যথা যুবক থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সেই হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক লো
ক জীবনে কখনও না কখনও এ ব্যথায় আক্রান্ত হয়। শুরু থেকে কোমরের ব্যথা নির্মূল করতে না পারলে রোগীকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
কোমরে ব্যথা কেন হয়, কীভাবে এই ব্যথা কমানো যায়—এ বিষয়গুলো নিয়েই আজ আমরা আলাপ করব।
কারণ
লাম্বার স্পনডোলাইসিস
কোমরের পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে।
এলআইডি
এটিও শক্তিশালী একটি কারণ। এটি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই ডিস্ক যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুমূলের ওপরে চাপ ফেলে। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
নন-স্পেসিফিক লো বেক পেন
অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু—তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়। এটি যুবকদের মধ্যে বেশি হয়। এই ব্যথা পুরোপুরি সারানোর চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই ব্যথা নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হয়। যেমন : শিরদাঁড়ায় টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হয়। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে, কোলে কিছু বহন করলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
কোমরে ব্যথার সময় আর যা হয়
  • প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না।
  • ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পা ঝিনঝিন ধরে থাকে।
  • সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে।
  • পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের শক্তি কমে যাওয়া।
  • মাংসপেশি মাঝেমধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়।

রোগনির্ণয়
  • কোমরের কিছু পরীক্ষা রয়েছে। ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা।
  • নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়।
  • কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করতে হবে।
  • রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা হয়। ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, শরীরে বাত আছে কি না—এসব পরীক্ষা করতে হয়।
  • ক্রনিক ব্যাক পেনের ক্ষেত্রে এইচএলএবি-২৭ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা
  • হালকা ব্যথা হলে ওষুধ এবং পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
  • তীব্র ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তিন-চার সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হতে পারে।
  • আর কম ব্যথা হলে আউটডোর ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে।
  • অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে। এটা একেবারে ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।

ডা. মোহাম্মদ আলী : বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)

আইবিএস রোগের চিকিৎসা কী?

ইবিএস খাদ্যনালির একটি রোগ। সাধারণত অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে এই রোগ হয়। জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন আনলে রোগ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. ফখরুল আলম। বর্তমানে তিনি হলি ফ্যামিলি মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : পরীক্ষার পর যখন নিশ্চিত হন কী কারণে রোগটি হয়েছে, এরপর আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
উত্তর : যখন আমরা বুঝতে পারি যে ছয় মাসের বেশি এই রোগটি আছে, তার বয়স ৫০ বছরের কম এবং তার কিছু মানসিক সমস্যাও আছে, তখন আমরা মনে করি এটি আইবিএস। আইবিএসে কিছু বিষয় থাকে না। হয়তো কারো কারো ওজন কমে গেল হঠাৎ করে। অথবা রক্তশূন্যতা দেখা দিল। অথবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ল, এগুলো কিন্তু আইবিএস নয়। কাজেই আমরা যদি ধরে নিই এই সমস্যাগুলো তার নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব সমস্যা পাওয়া গেল না, তাহলে এটি আইবিএস।
প্রশ্ন : এর চিকিৎসা কী?
উত্তর : রোগ যেমন অভিনব ধরনের। চিকিৎসাও তেমনি অভিনব ধরনের। এখানে যদি মানসিক অস্থিরতা, মানসিক সমস্যা এবং আচরণগত সমস্যা প্রধান কারণ হয়, তাহলে এগুলোর সমাধান করতে হবে। রোগীকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করতে হবে। মানসিকভাবে যদি তাকে আশ্বস্ত করতে পারেন, দেখা যায় তাতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাতে শরীর থেকে মনের চাপটা কম পড়ে। এরপর আইবিএসটা অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। কারো কারো ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যি। কারো কারো ক্ষেত্রে অল্পতেই কাজ হয়। সবার কিন্তু তাতে পুরোপুরি লাভ হয় না।
প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে কী করণীয়।
উত্তর : সেখানে আইবিএসের ধরন আছে। কারো হচ্ছে পাতলা পায়খানা বা অতিরিক্ত মলত্যাগের ধরনটা বেশি। একে আমরা ডাইরিয়াল টাইপ বলি। কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্যের ধরনটা বেশি। আমরা একে বলি কনস্টিপেটিং টাইপ। তো কোন ধরনের সেটা আমরা আগে বিচার করি। বিচার করার পর আমরা যদি দেখি ডাইরিয়াল টাইপ হয়, অবশ্য এ ধরনের রোগী বেশি হয়, বেশি বেশি পায়খানা হচ্ছে, বারবার পায়খানা হচ্ছে এবং মল নরম হয়ে যাচ্ছে। প্রথমেই খাবারের ধরন প্রাধান্য পাবে। দুধ, শাক, ঝাল তেল এগুলো খাবে না। কারো কারো বিভিন্ন ধরনের খাবারে উপকার হয়। কারো কারো বেল খেলে খুব লাভ হয়। কাঁচকলা খেলে খুব লাভ হয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলেও খুব ভালো কাজ হয়।
প্রশ্ন : কতদিন ধরে এই নিয়ম মানার বিষয়টি চলতে থাকে। কতদিন পর্যন্ত ফলোআপের জন্য আপনাদের কাছে আসতে হয়?
উত্তর : রোগীরা সাধারণত এক দুই মাস পরপর আমাদের কাছে আসে। যেহেতু এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। তাই বারবার এসে দেখিয়ে যেতে হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধও কিন্তু ব্যবহার করা যায়। যেমন যেটি পাতলা পায়খানা ধরনের, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা এগুলো থাকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ম্যাভেভারিন, অ্যালভেরিন, এই জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ আছে সেগুলো প্রয়োগ করতে পারি। এতে খাদ্যনালির গতিটা কমিয়ে দেওয়া যায়।
প্রশ্ন : রোগীর উন্নতি হচ্ছে কি না, সেটি আপনারা কীভাবে বোঝেন?
উত্তর : রোগী অনেকটা আরাম বোধ করেন। কেউ কেউ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। সুস্থ হওয়ার পর নিয়ম না মানলে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন আবার নিয়ম মানতে হয়। আর যদি কোনো মানসিক সমস্যা থাকে, তাহলে মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য কিছু ওষুধ দিই। তাতেও উনি যথেষ্ট উপকৃত হবেন।
প্রশ্ন : সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করা হলে ক্ষতিকর প্রভাব কী হতে পারে?
উত্তর : এখান থেকে সাধারণত শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা কম। তবে রোগীর পেশাগত বা সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। হয়তো অফিসে যেতে পারছেন না বা স্কুলে যেতে পারছেন না।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : প্রতিরোধ এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যার যেই ধরনের খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়, সেই খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে ইসবগুল খুব উপকারী। নিজে যে জিনিসটি খেয়ে আরাম বোধ করবেন সেটি খাবেন। বেশি বেশি দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা থাকলে তা কমিয়ে আনতে হবে। কারো কারো সাইকোথেরাপিতে কাজ হয়। কারো কারো মেডিটেশন, হিপনোটিজমে কাজ হয়। এই পরামর্শগুলোও আমরা দিই। মনের ওপর চাপ কমলে খাদ্যনালির চাপ কমে যায়। এতে অনেক লাভ হয়

ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন সহজেই

ন্যান্য অভ্যাসের ন্যায় ধূমপান একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটি যখন মানুষ আসক্ত হয়ে পরে তখন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এ কারণে এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু যারা ধুমপানে আসক্ত হয়েছে তারা খুব সহজে এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারে না। এর কারন হল হুটহাট করে ধূমপান ছেড়ে দিলে প্রথম প্রথম কিছু কিছু প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এই কারণে তাদের পক্ষে ধূমপান ছেড়ে দেয়া কঠিন হয়ে পরে।

আসুন জেনে নেই, ধূমপান ত্যাগ করার উপায়।

 

ধূমপান কেন বড় নেশা এবং কেন ছাড়বেন?

ধূমপান সহজেই ছাড়তে পারবেন যদি আপনি জানেন কখন ধূমপান নেশায় পরিনত হয়। তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন নামক একটি কেমিক্যাল থাকে যা এই নেশা সৃষ্টি করে। মানবদেহেকে সতেজ রাখতে দেহের ভিতর এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ হয়। কেউ যদি ধূমপান করে তাহলে ধীরে ধীরে এই হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান করলে তামাকের এই নিকোটিন হরমোনের কাজটি করে থাকে। ফলে হুট করে ধূমপান বন্ধ করলে আপনার অস্বস্তি লাগবে, দুর্বলতা বোধ হবে। কারন দেহ থেকে সেই হরমোন ধুম্পানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই ধূমপান বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যে এই হরমোন আবার আগের মত নিঃসরণ হওয়া শুরু করবে।

ধূমপান কিভাবে ছাড়বেন?

ধূমপানে আসক্ত হয়ে গেলে তা ত্যাগ করা একটু কঠিন হয়ে পরে। আসুন জেনে নেই ধূমপান ছাড়ার সহজ কিছু কৌশল।
১। হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দিবেন না, ৯০% মানুষ হঠাৎ করে ধূমপান বন্ধ করে দেয়। এভাবে মুলত খুব কম সংখ্যক লোক সফল হয়। বাকি লোকগুলো হতাশ হয়ে পুনরায় ধূমপান শুরু করে। তাই একটু সময় নিন, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন, অন্যের সাহায্য নিন তারপর আস্তে আস্তে ত্যাগের চেষ্টা করুন।

জেনে নিন, আপনি কেন ধূমপান ছাড়বেন?

কেন আপনি ধূমপান ছেড়ে দেবেন সেটি নির্ধারণ করুন। শুধুমাত্র খারাপ অভ্যাস বলে তা ছেড়ে দেবেন এমনটা মনে করলে পুনরায় তা শুরু করার প্রবনতা থেকে যায়। প্রথমে আপনি নিজেকে শক্ত সংকল্পে আবদ্ধ করুন। মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
২। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তামাকের পরিবর্তে অন্য উপায়ে নিকোটিন গ্রহন করতে পারেন।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে পারেন। কারন নিয়মিত ব্যায়াম করলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়।
৪। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খান। নিকোটিনের চাহিদাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্যান্য খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিন।
৫। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। তামাকের গন্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কেননা সিগারেটের ধোঁয়া নাকে আসলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে।

৬। যেসব বিষয় মাথায় রাখবেনঃ
  • ধূমপানের ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয় এমন কিছু থেকে দূরে থাকুন।
  • প্রথম কয়েকদিন আপনার জন্য একটু কষ্ট হবে তাই হতাশ হওয়া যাবে না। মনকে শক্ত রাখুন।
  • আমরা জানি ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব তাই ধূমপানের প্রতি ইচ্ছা পোষণ করবেন না।
  • ধূমপায়ীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করুন। কারন তাদেরকে ধূমপান করতে দেখে আপনারও ইচ্ছে জাগতে পারে।
  • প্রথম দিকে খুব বেশি কষ্ট হলে একটি সিগারেট খেতে পারেন কিন্তু তা যেন নিয়মিত না হয়ে যায়।
  • প্রথম দিকে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন,
– হাত পা শির শির করতে পারে,
– মাথা ব্যথা করতে পারে,
– পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে,
– ঠাণ্ডা লাগার মত অবস্থা হতে পারে,
– অতিরিক্ত রাগ হতে পারে,
– পর্যাপ্ত ঘুম না হতে পারে,
– মনোযোগের অভাব হতে পারে,
– দুশ্চিন্তা হতে পারে,
– হতাশা ও অস্বস্তি আসতে পারে,
এতে ভয় পাবেন না, কারন এসব কিছু মারাত্মক নয়, শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব প্রতিক্রিয়া নির্মূল করা সম্ভব।

শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

মানসিক সমস্যা নিয়ে যত ভ্রান্তি

মানসিক রোগ বা মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এসব ভ্রান্ত ধারণার জন্য ভুক্তভোগী সঠিক চিকিৎসা পান না বা সামাজিকভাবে অনেক হেয় হতে হয়।
মানসিক সমস্যা নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩২৬তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আমাদের সমাজে মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত কী কী ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে?
উত্তর : অনেকেরই এখন পর্যন্ত ধারণা যে মানসিক রোগ বলে আসলে কিছু নেই। কারণ, প্রত্যেক মানসিক রোগকে আমরা কোনো না কোনোভাবে অন্য ব্যাখ্যার মধ্যে নিয়ে যাই। যেমন ধরুন, সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগগুলোকে আমরা বলি জিনে ধরা বা ভূতে ধরা বা আলগায় পাওয়া। এই অংশটুকু কিন্তু একটি বিশাল অংশ, যারা মানসিক রোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এতে তারা রোগটি এড়িয়ে যায়। ভাবে, এ ধরনের রোগ হতেই পারে না। ভাবে, যে এটি কোনো বড় বিষয় নয়। আসলে এটিই একটি বড় বিষয়।
পরে আসে অন্য কুসংস্কারগুলো। যেমন : জিনে ধরা, ভূতে ধরা বিষয়গুলো কুসংস্কার। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখন পর্যন্ত আমরা মানসিক রোগকে বলি দুর্বলতা। পারিবারিক দুর্বলতা অথবা একটি ব্যক্তি মানুষের দুর্বলতা। অথবা একটি পরিবারের কোনো একটি ঐতিহাসিক দুর্বলতা। এই জন্য এ রোগগুলো মানুষের কাছে প্রকাশ করতে চায় না। অথবা এটি লজ্জাজনক ব্যাপার। এটা লুকিয়ে রাখা উচিত। এই ধারণাটা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়।
প্রশ্ন : আমাদের সমাজে একজন লোক যখন মানসিক সমস্যায় ভোগে, তখন তাকে পাগল হিসেবে ধরা হয়। তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজন বা অন্যরা মিশতে চায় না। তারা হয়তো ভাবে, আমার একটি সন্তান সে হয়তো মানসিক সমস্যায় ভুগছে, এটি বললে আমরা হয়তো একঘরে হয়ে যাব। এই ভয় কি কাজ করে?
উত্তর : এটিই। এই ভয়ই কাজ করে। এটিও কিন্তু একটি দুর্বলতার অংশ। দেখা গেল, বিয়ের একটি অনুষ্ঠান আমার ওই মানুষটিকে কখনো সামনে আনি না। অথচ অন্য যেকোনো অসুস্থতা কিন্তু আমরা সামনে নিয়ে আসি। ধরুন, আপনার হার্টের সমস্যা, আপনি কিন্তু সামনে এলে কোনো সমস্যা নেই। আপনার ডায়াবেটিস, সামনে আসতে কোনো সমস্যা নেই। আপনার প্রেশার, সামনে আসতে কোনো সমস্যা নেই। আপনার হাত-পা ভাঙা, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সামান্য পরিমাণ মানসিক সমস্যা এটি বলতেও সমস্যা, ওই ধরনের অবস্থায় পড়তেও সমস্যা। এই যে দুর্বলতা এটি কিন্তু একটি বড় অংশ। যদি এই অংশটুকুকে আমরা পার হয়ে যেতে পারি, তাহলে সারা পৃথিবীতে মানুষের কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে।
একজন মানুষ যখন পরিবারে অসুস্থ হয়, তার যেমন নিজের কার্যক্ষমতা কমে, একই সঙ্গে অন্য একজন দুজন মানুষকে কিন্তু সেখানে যোগ দিতে হয়। তাহলে অর্থনৈতিকভাবেও কিন্তু পরিবার বিভিন্নভাবে বঞ্চিত। শেষ পর্যন্ত কী হয়? ওই কাজটিকে ঘিরে প্রচুর পরিমাণে সমস্যা তৈরি হয়। এ বিষয়গুলো কিন্তু সামনে চলে আসবে। তারা উপার্জনক্ষম হতে পারবে। তারা কাজ করতে পারবে। এ জন্য কুসংস্কার বা স্টিগমা দূর করা খুবই জরুরি।
এটি পরিবার থেকে শুরু করা উচিত। প্রত্যেক মানুষ যদি এইভাবে বোঝে যে এটি একটি অসুস্থতা এবং চিকিৎসা করলে একটি নির্দিষ্ট অবস্থা পর্যন্ত ভালো হয়, তাহলে ভালো হবে।
আরেকটি বিষয় রয়েছে। একে আসলে কুসংস্কার বলব না। তবে এটি একটি সমস্যা। অনেক মানসিক রোগ রয়েছে, যেটি কখনো ভালো না হওয়ার মতো। কিন্তু অন্যান্য অনেক রোগও কিন্তু রয়েছে, যেটি ভালো না হওয়ার মতো। ওইখানে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা এখানে।
দেখা যায়, যে ওষুধগুলো দেওয়া হয়, এগুলোতে ঘুমের সমস্যা থাকে, অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এগুলোর কারণে কিন্তু স্টিগমা বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চলে আসে। অনেকে ভাবে, মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে গেলেই ঘুমের ওষুধ দিয়ে দেয়, আর কখনো ভালো হয় না।
প্রশ্ন : কারো কারো আচরণগত সমস্যা হয়, সেটি মানসিক রোগেরই একটি প্রতিফলন হতে পারে। পরিবার বা সমাজের লোক মনে করে এটা কোনো বিষয় নয়, সে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করছে। এই বিষয়গুলো কীভাবে দূর করা যায়?
উত্তর : এর অনেক বিষয় রয়েছে। কখনো কখনো যে একেবারে ইচ্ছাকৃতভাবে করে না, তা কিন্তু নয়। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের কাছে যদি নিয়ে আসে, আমরা যদি একদিন/ দুদিন বসি তাহলে বুঝি। যেমন : জেলখানার অনেক মানুষ কিন্তু আমাদের কাছে নিয়ে আসে। আমরা কিন্তু বুঝি, কোনটা ইচ্ছা করে করা। আর কোনটা আসলেই অসুস্থ। এটা কিন্তু করে অনেকে। আবার এরপরও যেটি হয়, কিছু কিছু রোগ রয়েছে, আমরা বলি কনভারশন ডিজঅর্ডার বা হিস্টিরিয়া। যে পরিমাণ চাপ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে বা দ্রুত যে পরিমাণ ক্ষমতা থাকে ব্যবস্থাপনা করার, যদি কোনো কারণে সমস্যা হয়, তখন কিন্তু তার মধ্যে এক ধরনের লক্ষণ তৈরি হয়। এর আবার একটি সুবিধাও রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এমনিতেই এই লক্ষণ কমে আসতে পারে। বিষণ্ণতাও কিন্তু কখনো কখনো নিজে নিজেই ঠিক হতে পারে। তখন অনেকের ভুল ধারণা হয়, এ তো ইচ্ছা করে করল, না হলে ভালো হলো কীভাবে।
আবার আরো কিছু কিছু বিষয় রয়েছে। মানুষের ধারণা মানসিক রোগ হলে এটি নিয়মিত হবে। লম্বা সময় ধরে চলতে থাকবে। এটি আর ভালো হবে না। অনেকে মনে করে কোনো রোগ হলে অন্য কোনো কাজই আর করতে পারবে না। আমাদের কাছে বলে, ওর যদি রোগ হয়, তাহলে টাকা চেনে কীভাবে। অনেকে ধারণা করেন, একজন মানুষ যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হন, তার কোনো কিছুই আর ঠিক থাকবে না। আবার অনেকে বলে ওর তো মাত্র শুরু হলো। এক মাস ধরে। অনেকে ভাবে, মানসিক রোগ বোধ হয় জন্ম থেকে হবে। এসব কারণে বিষয়গুলো নির্দিষ্টভাবে ধরা যায় না।
প্রশ্ন : একটি দ্বন্দ্ব কিন্তু থেকে যাচ্ছে। এটি দূর করার উপায় কী?
উত্তর : দূর করা তো কঠিন ব্যাপার। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ওই রকম বিশেষজ্ঞ নেই যে সব জায়গায় যাবে। যত বেশি বিশেষজ্ঞরা পৌঁছে গেছে সেইসব জায়গায়, তত সমস্যাগুলো কমে আসছে।
শুরুর দিকে কাজ করার সময় আমরা দেখতাম কি, জিনের আসর বসায় বা নাচানাচি করায়। তারা বলত কি, জিন সারানোর যতটুকু বিষয় সেটি করে দিলাম, কিন্তু এর বাকি যে সমস্যা এর জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। আমাদের কাছে চিঠিও আসত এ রকম। এগুলো কিন্তু এখন কমে আসছে। কিন্তু নেই সেটি আমি বলব না। এর একটি কারণ হলো এর পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
প্রশ্ন : অনেকে তো আবার ভালো হয়ে যায়। এর বিষয়টি কী?
উত্তর : কিছু কিছু রোগ রয়েছে সেলফ লিমিটিং বা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে, এর পর সেরে যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যেমন : ম্যানিক একটি কন্ডিশন রয়েছে, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে। এটিই সবচেয়ে বেশি মানুষের চোখে পড়ে। ম্যানিক কন্ডিশনে হয় কী, নিজেকে অনেক বড় মনে করে, অনেক কথাবার্তা বলে, লেকচার দিতে থাকে। আমি ইলেকশন করব, আল্লাহর সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। খাবার খাওয়ার দরকার নেই। ঘুমের দরকার নেই। এই ম্যানিকটাও কিন্তু সেলফ লিমিটিং। দুই মাস থেকে শুরু করে, দুই বছরের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে আসবেই। সে নিজে নিজে বুঝতে পারবে না যে কী করছে।
আসলে মানসিক রোগের চিকিৎসার ভ্রান্তি কাটতেই হবে, না হলে সঠিকভাবে এটি ব্যবস্থাপনা করা যাবে না।